লবিস্ট নিয়োগ কার জয় কার পরাজয়

নঈম নিজাম:ওয়াশিংটনের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের নাম ‘দ্য উইলার্ড ইন্টারকন্টিনেন্টাল ওয়াশিংটন’। সত্তর ও আশির দশকে এ হোটেলের লবিতে ভিড় জমাতেন বিশ্বের বিভিন্ন অবহেলিত-বঞ্চিত দেশের রাজনীতিকরা। তাঁরা সাক্ষাৎ করতে যেতেন মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে। দেখা করতেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। দেনদরবার করতেন দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য। আবার কারও টার্গেট থাকত পরের নির্বাচনে ক্ষমতা দখল। বেশি যেতেন সামরিক স্বৈরাচারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কথা বলতেন ক্ষমতায় থাকার জন্য মার্কিন সরকারের আনুকূল্য নিয়ে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফও লবি বৈঠক থেকে বাদ যেত না। বিশ্বব্যাংকের বড় কর্তারা এ হোটেলে এসে দেখা দিতেন গরিব দেশের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে। কথা বলতেন সাহায্যের পরিমাণ নিয়ে। বাদ যেত না সাহায্যের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্তগুলো। সংবাদপত্রে হেডলাইন হতো সেই শর্তের কথা। এই হোটেলের লবি সব সময় জমজমাট থাকত। লবির বৈঠক সফল হলে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর রাজনীতিবিদদের ভাগ্য খুলে যেত। আবার কারও বেলায় ঘটত বিদায় ঘণ্টা। লবি বৈঠকের নাম থেকেই লবিস্ট শব্দটির উপত্তি। লবি ও লবিস্ট শব্দ শুধু বাংলাদেশ নয়, ওয়াশিংটনেও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও মিডিয়ার কাছে।

 

অনেক বছর পর বাংলাদেশে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরকারি দল, বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। আবার বিএনপি বলছে সরকারি দলের অভিযোগ সঠিক নয়। ১৯৯১ সালের পর লবিস্ট শব্দ বাংলাদেশের ডিকশনারি থেকে উঠে গিয়েছিল। ফিরে আসে ওয়ান-ইলেভেনের পর। ওয়ান-ইলেভেন সরকার বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ দেয় তাদের পক্ষে কাজ করতে। আবার বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোও পাল্টা অবস্থান নেয়। তারাও বিদেশে লবিং বাড়ায় ওয়ান-ইলেভেন সরকারকে বিতাড়িত করতে। সে সময় আওয়ামী লীগ ও ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বাংলাদেশ সফরে আসেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী চেরি ব্লেয়ার। তিনি ঢাকায় এসে বৈঠক করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীনের সঙ্গে। আলাপ করেন দুই নেত্রীর মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে। তিনি এ নিয়ে প্রকাশ্যে দাবি রাখেন। একই সময়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে আমেরিকায় কাজ করেন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান জোশেফ ক্রাউলি। তাঁর সঙ্গে আমার একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি নিউইয়র্কে আমাদের এসটিভি ইউএস অফিসেও এসেছিলেন। দিয়েছিলেন দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। বলেছিলেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা। শুধু জোশেফ ক্রাউলি নন, আরও অনেক কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন তখন।

আমেরিকান সরকারব্যবস্থা নিয়ে অনেক হিসাব-নিকাশ মেলানো যাবে না। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি আমেরিকা সফর করেছিলাম স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে। চার সপ্তাহের এ সফরসূচিতে আমাদের যাত্রা হয়েছিল ওয়াশিংটন দিয়ে। আমি গিয়েছিলাস এটিএন বাংলা থেকে। এনটিভি থেকে যান হাসনাইন খুরশিদ সূচী। দক্ষিণ এশিয়ার আট সাংবাদিককে তারা নিয়ে যান ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস কর্মসূচির আওতায়। ভারত থেকে দুজন, পাকিস্তান থেকে দুজন, নেপাল থেকে একজন এবং আফগানিস্তান থেকে একজন সাংবাদিক গিয়েছিলেন। এ সফরকালে আমাদের ধারণা দেওয়া হয় কীভাবে চলে মার্কিন প্রশাসন। দেখানো হয় আমেরিকান কূটনীতি, বিচারব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, পুলিশ বিভাগ, মিডিয়া কীভাবে পরিচালিত হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট, পেন্টাগনের পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। বড় বড় মিডিয়া হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। মিসৌরি স্কুল অব জার্নালিজমে করানো হয় টানা ক্লাস। ট্যুর শেষ হয় জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখানোর মধ্য দিয়ে। শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। সবশেষে নিয়ে যাওয়া হয় থিয়েটারে। দেখেছিলাম লায়নকিং শো। ওই সফরকালে ওয়াশিংটনে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় আলোচ্য হোটেলটিতে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা ছিলেন আমাদের গাইড। তিনি বললেন, এ হোটেলেই লবিস্টরা বসেন। সেরে নেন তাঁদের কূটনীতি। জানতে চাইলাম এ হোটেলের বাইরে কি বৈঠক হয় না? বললেন, এ হোটেলে কংগ্রেসম্যানরা খোশমেজাজে বেশি আসেন। আড্ডা দেন। যে কারণে এ হোটেলকে সবাই বৈঠকের জন্য বেছে নেন। অনেকে লাঞ্চ, ডিনারে প্রবেশের আগে সাক্ষাৎপ্রার্থী কোনো দেশের মন্ত্রী, এমপি, বিরোধী দলের নেতাকে কয়েক মিনিট সময় দেন। সেই ছবি সংশ্লিষ্ট নেতাদের দেশের সংবাদপত্র ছাপে ফলাও করে। জানিয়ে দেয় বিরাট বৈঠকের খবর। আবার অনেকে সবকিছু গোপনে রাখেন। নির্ভর করছে কোনটি করলে ভালো হবে তার ওপর। শুধু মার্কিন প্রশাসন, কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক হয় তা নয়, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ কর্তাদের সঙ্গেও আলাপের স্থান এ হোটেলের লবি। আর বৈঠকের আয়োজন করতে অনেক ফার্ম কাজ করে। বৈঠকের আয়োজনকারী ফার্মকে মোটা অঙ্কের ডলার দিতে হয়। অর্থের ওপর নির্ভর করে লবিস্ট ফার্মগুলো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।

 

এখানে লবিং হয় গণতন্ত্রের পক্ষে। আবার লবিং হয় সামরিক শাসন জারিকে সমর্থন জানিয়ে। অনেক দেশের সেনাশাসকরা ১২ মাস লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে রাখতেন। সামরিক শাসন জারির পর গণতন্ত্রের সবকদানকারী দেশগুলোর সমর্থন আদায়ই থাকত সেনাশাসকদের টার্গেট। আমাদের সফরসঙ্গীদের একজন ছিলেন মহসিন রাজা। তিনি পাকিস্তানের এআরওয়াই টিভির হেড অব নিউজ ছিলেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে মহসিন রাজা কঠিন প্রশ্ন করে বসেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে পারভেজ মোশাররফ সামরিক শাসন জারির দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। সিএনএন লাইভ করে সেই সংবাদ সম্মেলন। সারা দুনিয়ার মানুষ তা দেখতে পায়। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বুশকে প্রশ্ন করেন, পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়েছে। সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতা নিয়েছেন। অনেকে বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থন নিয়ে এ সামরিক শাসন জারি হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষের বিশ্বাস আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সরাসরি সমর্থন ছাড়া পাকিস্তানের মতো দেশে সামরিক শাসন জারি অসম্ভব। জবাবে প্রেসিডেন্ট বুশ তাঁর পাশে থাকা প্রেস সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে জানতে চান, হু ইজ পারভেজ মোশাররফ? কবে তিনি পাকিস্তানের পাওয়ার নিলেন? মহসিন রাজা জানতে চান এটা কি বিশ্বাসযোগ্য পাকিস্তানের মতো দেশে সামরিক শাসন জারি হলো অথচ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিছুই জানেন না? পাকিস্তানের মার্কিন দূতাবাস কি কোনো বার্তা আগে পরে পাঠায়নি? পাঠিয়ে থাকলে কেন এত হিপোক্রেসি। পিনপতন নীরবতায় আমরা জবাব শোনার অপেক্ষায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা বললেন, এটাই সত্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট না-ও জানতে পারেন আগের রাতে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়েছে। দূতাবাসের বার্তা আমাদের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে আসার পর তারাই প্রয়োজনীয় গাইডলাইন ও নির্দেশ পাঠিয়ে দেন। সিদ্ধান্ত নেন ডেস্কে কর্মরত কর্মকর্তাই। তারপর মনে করলে সিনিয়র কর্মকর্তা ও পরিচালক পর্যায়ে জানান। পরিচালক প্রয়োজন মনে করলে সেক্রেটারিকে (মন্ত্রী) অবহিত করেন। যুদ্ধের মতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে তখন প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা হয়। তাই আগের রাতে পাকিস্তানে কী ঘটেছে, সে দেশের সেনাপ্রধান কী কান্ড ঘটালেন মধ্যরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে জানানোর কিছু নেই। তিনি এ খবর নিয়ে সকালবেলায় সংবাদ সম্মেলন করতে গেছেন এও মনে করার কারণ নেই। বিশ্বে পাকিস্তানে হঠাৎ সেনা শাসন ঘোষণার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মাথা ঘামানোর মতো।

জবাব শুনে আমরা আর কেউ এ নিয়ে কথা বাড়ালাম না। এর মধ্যে আফগান ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলেন ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধি একরাম। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মনে হলো আমাদের চিন্তা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম-কানুনে অনেক ফারাক আছে। তাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। কাজ করতে করতে বেশির ভাগ মানুষের সপ্তাহ শেষ হয়ে যায়। তখন তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন সপ্তাহের শেষ দিনের আনন্দ-ফুর্তি নিয়ে। ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ড শেষ করে আবার যোগ দেন কাজে। রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান অল্প কিছু মানুষ। তাঁরা শুধু আমেরিকা নয়, দুনিয়া চালান। সেদিন এক বন্ধু প্রশ্ন করলেন, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমাদের ওয়াশিংটন দূতাবাস কেন আগে জানতে পারল না? জবাবে বললাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। বন্ধু বললেন, এ কেমন কথা? ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সারা দুনিয়ায় আমাদের দূতাবাস আছে। সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখা তাদের কাজ। তারা প্রয়োজন মনে করলে লবিস্ট নিয়োগ দেবে। প্রয়োজন মনে করলে নিজেরা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে সম্পর্ক উন্নত করবে। বিএনপির কর্মকান্ড সরকারকে ছাড়িয়ে যায় কীভাবে? সরকারের চেয়ে শক্তিশালী তো বিরোধী দল হতে পারে না। সরকারের কাছে সব ম্যাকানিজম আছে। তার পরও পারছে না কেন? কিছু বলার আগে বন্ধু বললেন, হয়তো সব আছে, কিন্তু অভাব দক্ষ লোকবল ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর কয় দিক সামাল দেবেন? কাজটা সবাই মিলে দক্ষতার সঙ্গে করলে এত ঝামেলা তৈরি হয় না। বোঝাই যায় সব নিষেধাজ্ঞার টার্গেট আগামী নির্বাচন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো চাইছে আগে থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে রাখতে। তাই সরকারকে পথ চলতে হবে সাবধানে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে থাকতে হবে বাস্তবতার নিরিখে। দেশ-বিদেশে আমাদের কূটনীতিকরা করোনার দোহাই দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টিতে তাঁদের সক্রিয় হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লড়ছেন ৩ হাজার কিলোমিটার স্পিডে। অন্য গাড়িগুলোর স্পিড ৩ কিলোমিটার হলে চলে কীভাবে?

 

আসলে এখন সরকারের ভিতরে সরকার আছে। কে কার পক্ষে-বিপক্ষে বোঝা মুশকিল। পরিস্থিতি সামলাতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা রাখতে হবে। একজন রাজনীতিবিদ চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। রাজনীতিবিদদের বড় শক্তি জনগণ। একজন সত্যিকারের নেতা রাজনীতি করেন জনগণের ওপর ভর করে। লবিস্ট নিয়ে তাঁরা ভাবেন না। জনগণ পাশে থাকলে লবিস্টের দরকারও হয় না। বঙ্গবন্ধু যদি লবিস্ট খুঁজতে যেতেন তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। তাঁদের আজগুবি ফরমুলায় পড়ে থাকত এ দেশ। বঙ্গবন্ধু বুঝতেন জনগণই তাঁর শক্তি। তিনি শক্তির ওপর ভর করেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। জনগণকে জয় করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর মেয়েও বাবার ধাঁচ পেয়েছেন। শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময় তাঁর সঙ্গে সারা দেশ ঘুরেছি। তিনিও মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। বাবার মতো দেশকে ভালোবাসেন বলেই নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন ২৪ ঘণ্টা। লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে চিন্তা করেন না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কে খুশি হলো, বেজার হলো ভাবেন না। শেখ হাসিনার আস্থা দেশের মানুষের প্রতি। আজ অনেকেই শেখ হাসিনার বিপক্ষে কথা বলেন। সমালোচনা করেন। একবারও কি চিন্তা করেছেন শেখ হাসিনা না থাকলে আগামীতে কী হবে? অসাম্প্রদায়িক চেতনার এ বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। মানুষ আর পেছনে যেতে চায় না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের ধ্বংসলীলা দেখতে চায় না। হারাতে চায় না প্রত্যাশার আলো। এগিয়ে যাওয়াকে ধরে রাখতে চায় সবাই।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» আইনজীবী হত্যার তদন্তের নির্দেশ, দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» ‌আমরা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেব না : হাসনাত আব্দুল্লাহ

» লক্ষ্মীপুরে জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের স্মরণে জেলা প্রশাসনের সভা 

» রবি আজিয়াটাকে অ্যাডভান্সড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

» ১৫০ কৃষি উদ্যোক্তার জন্য ইউসিবির দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আয়োজন

» আওয়ামী সন্ত্রাসীর হামলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু

» বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা: পরিবেশ উপদেষ্টা

» চিন্ময় দাসকে গ্রেফতারের বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ

» ‘শ্রম অধিকার চর্চার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা জরুরি’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

লবিস্ট নিয়োগ কার জয় কার পরাজয়

নঈম নিজাম:ওয়াশিংটনের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের নাম ‘দ্য উইলার্ড ইন্টারকন্টিনেন্টাল ওয়াশিংটন’। সত্তর ও আশির দশকে এ হোটেলের লবিতে ভিড় জমাতেন বিশ্বের বিভিন্ন অবহেলিত-বঞ্চিত দেশের রাজনীতিকরা। তাঁরা সাক্ষাৎ করতে যেতেন মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে। দেখা করতেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। দেনদরবার করতেন দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য। আবার কারও টার্গেট থাকত পরের নির্বাচনে ক্ষমতা দখল। বেশি যেতেন সামরিক স্বৈরাচারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কথা বলতেন ক্ষমতায় থাকার জন্য মার্কিন সরকারের আনুকূল্য নিয়ে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফও লবি বৈঠক থেকে বাদ যেত না। বিশ্বব্যাংকের বড় কর্তারা এ হোটেলে এসে দেখা দিতেন গরিব দেশের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে। কথা বলতেন সাহায্যের পরিমাণ নিয়ে। বাদ যেত না সাহায্যের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্তগুলো। সংবাদপত্রে হেডলাইন হতো সেই শর্তের কথা। এই হোটেলের লবি সব সময় জমজমাট থাকত। লবির বৈঠক সফল হলে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর রাজনীতিবিদদের ভাগ্য খুলে যেত। আবার কারও বেলায় ঘটত বিদায় ঘণ্টা। লবি বৈঠকের নাম থেকেই লবিস্ট শব্দটির উপত্তি। লবি ও লবিস্ট শব্দ শুধু বাংলাদেশ নয়, ওয়াশিংটনেও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও মিডিয়ার কাছে।

 

অনেক বছর পর বাংলাদেশে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরকারি দল, বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। আবার বিএনপি বলছে সরকারি দলের অভিযোগ সঠিক নয়। ১৯৯১ সালের পর লবিস্ট শব্দ বাংলাদেশের ডিকশনারি থেকে উঠে গিয়েছিল। ফিরে আসে ওয়ান-ইলেভেনের পর। ওয়ান-ইলেভেন সরকার বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ দেয় তাদের পক্ষে কাজ করতে। আবার বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোও পাল্টা অবস্থান নেয়। তারাও বিদেশে লবিং বাড়ায় ওয়ান-ইলেভেন সরকারকে বিতাড়িত করতে। সে সময় আওয়ামী লীগ ও ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বাংলাদেশ সফরে আসেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী চেরি ব্লেয়ার। তিনি ঢাকায় এসে বৈঠক করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীনের সঙ্গে। আলাপ করেন দুই নেত্রীর মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে। তিনি এ নিয়ে প্রকাশ্যে দাবি রাখেন। একই সময়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে আমেরিকায় কাজ করেন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান জোশেফ ক্রাউলি। তাঁর সঙ্গে আমার একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি নিউইয়র্কে আমাদের এসটিভি ইউএস অফিসেও এসেছিলেন। দিয়েছিলেন দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। বলেছিলেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা। শুধু জোশেফ ক্রাউলি নন, আরও অনেক কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন তখন।

আমেরিকান সরকারব্যবস্থা নিয়ে অনেক হিসাব-নিকাশ মেলানো যাবে না। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি আমেরিকা সফর করেছিলাম স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে। চার সপ্তাহের এ সফরসূচিতে আমাদের যাত্রা হয়েছিল ওয়াশিংটন দিয়ে। আমি গিয়েছিলাস এটিএন বাংলা থেকে। এনটিভি থেকে যান হাসনাইন খুরশিদ সূচী। দক্ষিণ এশিয়ার আট সাংবাদিককে তারা নিয়ে যান ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস কর্মসূচির আওতায়। ভারত থেকে দুজন, পাকিস্তান থেকে দুজন, নেপাল থেকে একজন এবং আফগানিস্তান থেকে একজন সাংবাদিক গিয়েছিলেন। এ সফরকালে আমাদের ধারণা দেওয়া হয় কীভাবে চলে মার্কিন প্রশাসন। দেখানো হয় আমেরিকান কূটনীতি, বিচারব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, পুলিশ বিভাগ, মিডিয়া কীভাবে পরিচালিত হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট, পেন্টাগনের পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। বড় বড় মিডিয়া হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। মিসৌরি স্কুল অব জার্নালিজমে করানো হয় টানা ক্লাস। ট্যুর শেষ হয় জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখানোর মধ্য দিয়ে। শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। সবশেষে নিয়ে যাওয়া হয় থিয়েটারে। দেখেছিলাম লায়নকিং শো। ওই সফরকালে ওয়াশিংটনে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় আলোচ্য হোটেলটিতে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা ছিলেন আমাদের গাইড। তিনি বললেন, এ হোটেলেই লবিস্টরা বসেন। সেরে নেন তাঁদের কূটনীতি। জানতে চাইলাম এ হোটেলের বাইরে কি বৈঠক হয় না? বললেন, এ হোটেলে কংগ্রেসম্যানরা খোশমেজাজে বেশি আসেন। আড্ডা দেন। যে কারণে এ হোটেলকে সবাই বৈঠকের জন্য বেছে নেন। অনেকে লাঞ্চ, ডিনারে প্রবেশের আগে সাক্ষাৎপ্রার্থী কোনো দেশের মন্ত্রী, এমপি, বিরোধী দলের নেতাকে কয়েক মিনিট সময় দেন। সেই ছবি সংশ্লিষ্ট নেতাদের দেশের সংবাদপত্র ছাপে ফলাও করে। জানিয়ে দেয় বিরাট বৈঠকের খবর। আবার অনেকে সবকিছু গোপনে রাখেন। নির্ভর করছে কোনটি করলে ভালো হবে তার ওপর। শুধু মার্কিন প্রশাসন, কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক হয় তা নয়, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ কর্তাদের সঙ্গেও আলাপের স্থান এ হোটেলের লবি। আর বৈঠকের আয়োজন করতে অনেক ফার্ম কাজ করে। বৈঠকের আয়োজনকারী ফার্মকে মোটা অঙ্কের ডলার দিতে হয়। অর্থের ওপর নির্ভর করে লবিস্ট ফার্মগুলো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।

 

এখানে লবিং হয় গণতন্ত্রের পক্ষে। আবার লবিং হয় সামরিক শাসন জারিকে সমর্থন জানিয়ে। অনেক দেশের সেনাশাসকরা ১২ মাস লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে রাখতেন। সামরিক শাসন জারির পর গণতন্ত্রের সবকদানকারী দেশগুলোর সমর্থন আদায়ই থাকত সেনাশাসকদের টার্গেট। আমাদের সফরসঙ্গীদের একজন ছিলেন মহসিন রাজা। তিনি পাকিস্তানের এআরওয়াই টিভির হেড অব নিউজ ছিলেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে মহসিন রাজা কঠিন প্রশ্ন করে বসেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে পারভেজ মোশাররফ সামরিক শাসন জারির দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। সিএনএন লাইভ করে সেই সংবাদ সম্মেলন। সারা দুনিয়ার মানুষ তা দেখতে পায়। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বুশকে প্রশ্ন করেন, পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়েছে। সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতা নিয়েছেন। অনেকে বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থন নিয়ে এ সামরিক শাসন জারি হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষের বিশ্বাস আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সরাসরি সমর্থন ছাড়া পাকিস্তানের মতো দেশে সামরিক শাসন জারি অসম্ভব। জবাবে প্রেসিডেন্ট বুশ তাঁর পাশে থাকা প্রেস সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে জানতে চান, হু ইজ পারভেজ মোশাররফ? কবে তিনি পাকিস্তানের পাওয়ার নিলেন? মহসিন রাজা জানতে চান এটা কি বিশ্বাসযোগ্য পাকিস্তানের মতো দেশে সামরিক শাসন জারি হলো অথচ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিছুই জানেন না? পাকিস্তানের মার্কিন দূতাবাস কি কোনো বার্তা আগে পরে পাঠায়নি? পাঠিয়ে থাকলে কেন এত হিপোক্রেসি। পিনপতন নীরবতায় আমরা জবাব শোনার অপেক্ষায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা বললেন, এটাই সত্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট না-ও জানতে পারেন আগের রাতে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়েছে। দূতাবাসের বার্তা আমাদের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে আসার পর তারাই প্রয়োজনীয় গাইডলাইন ও নির্দেশ পাঠিয়ে দেন। সিদ্ধান্ত নেন ডেস্কে কর্মরত কর্মকর্তাই। তারপর মনে করলে সিনিয়র কর্মকর্তা ও পরিচালক পর্যায়ে জানান। পরিচালক প্রয়োজন মনে করলে সেক্রেটারিকে (মন্ত্রী) অবহিত করেন। যুদ্ধের মতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে তখন প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা হয়। তাই আগের রাতে পাকিস্তানে কী ঘটেছে, সে দেশের সেনাপ্রধান কী কান্ড ঘটালেন মধ্যরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে জানানোর কিছু নেই। তিনি এ খবর নিয়ে সকালবেলায় সংবাদ সম্মেলন করতে গেছেন এও মনে করার কারণ নেই। বিশ্বে পাকিস্তানে হঠাৎ সেনা শাসন ঘোষণার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মাথা ঘামানোর মতো।

জবাব শুনে আমরা আর কেউ এ নিয়ে কথা বাড়ালাম না। এর মধ্যে আফগান ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলেন ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধি একরাম। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মনে হলো আমাদের চিন্তা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম-কানুনে অনেক ফারাক আছে। তাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। কাজ করতে করতে বেশির ভাগ মানুষের সপ্তাহ শেষ হয়ে যায়। তখন তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন সপ্তাহের শেষ দিনের আনন্দ-ফুর্তি নিয়ে। ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ড শেষ করে আবার যোগ দেন কাজে। রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান অল্প কিছু মানুষ। তাঁরা শুধু আমেরিকা নয়, দুনিয়া চালান। সেদিন এক বন্ধু প্রশ্ন করলেন, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমাদের ওয়াশিংটন দূতাবাস কেন আগে জানতে পারল না? জবাবে বললাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। বন্ধু বললেন, এ কেমন কথা? ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সারা দুনিয়ায় আমাদের দূতাবাস আছে। সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখা তাদের কাজ। তারা প্রয়োজন মনে করলে লবিস্ট নিয়োগ দেবে। প্রয়োজন মনে করলে নিজেরা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে সম্পর্ক উন্নত করবে। বিএনপির কর্মকান্ড সরকারকে ছাড়িয়ে যায় কীভাবে? সরকারের চেয়ে শক্তিশালী তো বিরোধী দল হতে পারে না। সরকারের কাছে সব ম্যাকানিজম আছে। তার পরও পারছে না কেন? কিছু বলার আগে বন্ধু বললেন, হয়তো সব আছে, কিন্তু অভাব দক্ষ লোকবল ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর কয় দিক সামাল দেবেন? কাজটা সবাই মিলে দক্ষতার সঙ্গে করলে এত ঝামেলা তৈরি হয় না। বোঝাই যায় সব নিষেধাজ্ঞার টার্গেট আগামী নির্বাচন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো চাইছে আগে থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে রাখতে। তাই সরকারকে পথ চলতে হবে সাবধানে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে থাকতে হবে বাস্তবতার নিরিখে। দেশ-বিদেশে আমাদের কূটনীতিকরা করোনার দোহাই দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টিতে তাঁদের সক্রিয় হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লড়ছেন ৩ হাজার কিলোমিটার স্পিডে। অন্য গাড়িগুলোর স্পিড ৩ কিলোমিটার হলে চলে কীভাবে?

 

আসলে এখন সরকারের ভিতরে সরকার আছে। কে কার পক্ষে-বিপক্ষে বোঝা মুশকিল। পরিস্থিতি সামলাতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা রাখতে হবে। একজন রাজনীতিবিদ চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। রাজনীতিবিদদের বড় শক্তি জনগণ। একজন সত্যিকারের নেতা রাজনীতি করেন জনগণের ওপর ভর করে। লবিস্ট নিয়ে তাঁরা ভাবেন না। জনগণ পাশে থাকলে লবিস্টের দরকারও হয় না। বঙ্গবন্ধু যদি লবিস্ট খুঁজতে যেতেন তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। তাঁদের আজগুবি ফরমুলায় পড়ে থাকত এ দেশ। বঙ্গবন্ধু বুঝতেন জনগণই তাঁর শক্তি। তিনি শক্তির ওপর ভর করেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। জনগণকে জয় করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর মেয়েও বাবার ধাঁচ পেয়েছেন। শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময় তাঁর সঙ্গে সারা দেশ ঘুরেছি। তিনিও মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। বাবার মতো দেশকে ভালোবাসেন বলেই নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন ২৪ ঘণ্টা। লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে চিন্তা করেন না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কে খুশি হলো, বেজার হলো ভাবেন না। শেখ হাসিনার আস্থা দেশের মানুষের প্রতি। আজ অনেকেই শেখ হাসিনার বিপক্ষে কথা বলেন। সমালোচনা করেন। একবারও কি চিন্তা করেছেন শেখ হাসিনা না থাকলে আগামীতে কী হবে? অসাম্প্রদায়িক চেতনার এ বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। মানুষ আর পেছনে যেতে চায় না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের ধ্বংসলীলা দেখতে চায় না। হারাতে চায় না প্রত্যাশার আলো। এগিয়ে যাওয়াকে ধরে রাখতে চায় সবাই।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com